হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী গরু ও লাঙল দিয়ে চাষাবাদ
প্রাচীনকালে মানুষ যখন কৃষি কাজ শুরু করে তখন বসত বাড়ির আশেপাশে মাটি খুঁড়ে কৃষি বীজ বপন করতো। পরবর্তীতে মানুষ বৃহৎ পরিসরে কৃষি কাজ শুরু করলে জমি চাষের জন্য গরু ও লাঙলের ব্যবহার শুরু হয়। কাঠের তৈরি লাঙলের মাথায় একটা লোহার ফল লাগানো থাকে যা জমির মাটি খুঁড়তে সহায়তা করে। তখনকার দিনে বৃহৎ পরিসরে কৃষি কাজের একমাত্র অবলম্বন ছিল গরু ও লাঙল। গরু ও লাঙল দিয়েই জমি চাষ করা হতো। গ্রামের এমন কোন বাড়ি ছিল না যে বাড়িতে দু-চারটা গরু ছিল না। জমি চাষের জন্য সবাই গরু ও লাঙল ব্যবহার করতো। কিন্তু কালের প্রবাহে আজ প্রায় হারিয়ে গেছে ঐতিহ্যবাহী গরু ও লাঙল দিয়ে হাল-চাষ!
সভ্যতার উন্নতির সাথে সাথে বিজ্ঞান আবিষ্কার করেছে নতুন নতুন কৃষি যন্ত্রপাতি। আজকাল কৃষি কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে আধুনিক সব কৃষি যন্ত্রপাতি। গরু ও লাঙলের পরিবর্তে ব্যবহার করা হয় ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলারসহ আধুনিক সব কৃষি যন্ত্রপাতি। ফলে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য গরু ও লাঙল দিয়ে হাল চাষ।উন্নত প্রযুক্তির সাথে পেরে উঠছে না গরু ও লাঙলের দিয়ে কৃষি কাজ। ফলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আজ গরু ও লাঙল দিয়ে চাষাবাদ বিলুপ্ত প্রায়।
আজ থেকে ১৫-২০ বছর আগেও হালচাষের একমাত্র ভরসা ছিল গরু ও লাঙল। কিন্তু কালের পরিক্রমায় তা হারিয়ে গেছে। তখনকার দিনে হালচাষে গরু ও লাঙলের কোন বিকল্প ছিল না। কিন্তু কৃষি কাজের আধুনিক যন্ত্রপাতি আবিষ্কারের ফলে গরু ও লাঙল আবেদন হারিয়ে ফেলছে। মানুষ গরু ও লাঙল দিয়ে চাষাবাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। সকল কৃষক এখন কৃষি কাজের জন্য আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির উপর নির্ভরশীল হচ্ছেন। ফলে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য গরু ও লাঙল দিয়ে চাষাবাদ।
একটা সময় কৃষি কাজের জন্য কোন আধুনিক যন্ত্রপাতি ছিল না। তখন কৃষি কাজ গরু ও লাঙল ছাড়া কল্পনাও করা যেত না। সময় পরিবর্তনের সাথে সাথে মানুষের জীবন যাপন ও কৃষি কাজকে সহজ করতে আবিষ্কৃত হয়েছে আধুনিক সব যন্ত্রপাতি। আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি আবিষ্কারের ফলে সহজ হয়েছে কৃষি কাজ। মানুষ সময়কে বাচাতে গরু ও লাঙলের পরিবর্তে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতিতে ঝুঁকছে। আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ফলে একদিকে যেমন সহজ হয়েছে কৃষি কাজ অন্যদিকে কমেছে জমির উর্বরতা। বাড়ছে সার ও কীটনাশকের ব্যবহার যা মানব স্বাস্থ্যের ব্যাপক ক্ষতি করছে। গরু ও লাঙল দিয়ে চাষাবাদের ফলে জমির আগাছা পচে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পেত। ফলে ফসলের উৎপাদন বেশি হতো। মানুষ সার ও কীটনাশক মুক্ত ফসল উৎপাদন করতো।
আমরা ছোট্টবেলায় দেখেছি গ্রামের প্রত্যেক বাড়িতেই হালচাষের জন্য গরু ও লাঙল থাকতো। কিন্তু এখনকার দিনে গ্রামের বাড়িতে গরু ও লাঙল খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। যদিও কিছু কিছু বাড়িতে গরু পালন করা হয় তা চাষাবাদের জন্য নয়, শখের বশে। আগে কৃষকরা সকালবেলা গরু ও লাঙল নিয়ে মাঠে যেত। বেলা গড়িয়ে এলে বাড়িতে ফিরতো। আর এখন কোন কৃষককে আর গরু ও লাঙল নিয়ে মাঠে যেতে দেখা যায় না। দেখা যায় না গরু ও লাঙল দিয়ে জমি চাষ করতে। কালের প্রবাহে হারিয়ে গেছে গরু ও লাঙল।
আগেকার দিনে বড় বড় শিল্পীদের তুলিতে স্থান পেত গরু ও লাঙল দিয়ে চাষাবাদ। কত শিল্পীর তুলিতে আঁকা হয় গরু ও লাঙল দিয়ে চাষাবাদের ছবি। শিল্পী জয়নুল আবেদীনের কথা না বললেই নয়। তার রঙ তুলিতে আঁকা ছবিতে স্থান করে নেয় গরু ও লাঙল দিয়ে চাষাবাদ। গ্রামের বাংলার ঐতিহ্যবাহী দৃশ্য গুলোর ছবির মধ্যে অন্যতম ছিল গরু ও লাঙলের ছবি। প্রাচীনকাল থেকেই মানুষের প্রধান পেশা ছিল কৃষি কাজ। আর কৃষি কাজের একমাত্র অবলম্বন ছিল গরু ও লাঙল। ফলে গরু ও লাঙল স্থান করে নেয় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য হিসেবে।
একবিংশ শতাব্দীতে এসে গরু ও লাঙল দিয়ে চাষাবাদ বিলুপ্ত প্রায়। এখন আর খুঁজেই পাওয়া যায় না গরু ও লাঙল দিয়ে চাষাবাদ। মানুষের আগ্রহ নেই গরু ও লাঙল দিয়ে চাষাবাদে। ফলে এমনি এমনিতেই হারিয়ে গেছে ঐতিহ্যবাহী গরু ও লাঙল দিয়ে চাষাবাদ। কিছু কিছু জায়গায় যদিও থেকে থাকে গরু ও লাঙল দিয়ে চাষাবাদ, তা কতদিন টিকতে পারবে আধুনিক যন্ত্রপাতি কাছে তা অনিশ্চিত। মানুষের আধুনিক যন্ত্রপাতির প্রতি ঝোঁকই বাধ্য করেছে গরু ও লাঙল দিয়ে চাষাবাদ বিলুপ্তিতে। হয়তো এখন আর গরু ও লাঙল দিয়ে চাষাবাদের প্রচলন ফিরিয়ে আনা সম্ভবও নয়!
Leave a Reply